পদ্মা সেতুর প্রভাব: যাত্রীর অভাবে সদরঘাটে লঞ্চ কমেছে অর্ধেকের বেশি

Passenger Voice    |    ০৭:১০ পিএম, ২০২৪-০৪-০৪


পদ্মা সেতুর প্রভাব: যাত্রীর অভাবে সদরঘাটে লঞ্চ কমেছে অর্ধেকের বেশি

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। বাকি আর ছয় দিন। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ ইট-কাঠের শহর ছেড়ে মানুষ ছুটছে নাড়ির টানে। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন নাগরিকরা। ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে যাওয়ার ঝক্কি কমাতে অনেকে আগেই পরিবারকে গ্রামে পাঠাতে শুরু করেছেন।

অন্যান্য বছর এই সময়টায় দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষের ভিড় লেগে থাকত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। তবে গত দুবছর ধরে চিত্র ভিন্ন। দ্রুত যাতায়াতের জন্য সবাই বেছে নিচ্ছেন পদ্মা সেতু হয়ে বাসরুট।

বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম খান বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল দিয়ে বিভিন্ন রুটে লঞ্চ চলাচল করতো দৈনিক ১০০-১৫০টি। যাত্রীর অভাবে সেটা এখন অর্ধেকের বেশি কমে দাঁড়িয়েছে ৪০-৫০টিতে।

এই পথে যাতায়াতকারীরা বলছেন, পদ্মা সেতু হওয়ার আগে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিলো এই লঞ্চ। তাই সবাই পুরান ঢাকার জ্যাম ঢেলে ছুটে আসতেন এই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। কিন্তু এখন সবাই পদ্মা সেতু হয়ে চলে যাচ্ছেন। এই পথ খুব একটা মাড়ান না। তবে স্বস্তির যাতায়তের জন্য এখনো অনেকের পছন্দের শীর্ষে লঞ্চযাত্রা।

সুমি নামে এক যাত্রীর সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় কথা হয় সদরঘাটে। তিনি ঢাকায় এসেছেন চিকিৎসার কাজে। বলেন, পদ্মা সেতুতে করে এখন সবাই যায় বরিশালে। তাই তো এখন এই সদরঘাটে আগের মতো এতো ভিড় নেই। আমার লঞ্চের যাতায়াত ভালো লাগে। বরিশাল রাঙাবালি যাব। সময় লাগবে ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা। সময় বেশি লাগে। তারপরও এই লঞ্চে আমার ভালো লাগে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮-১৯ সেশনে কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়ছেন রাফি। বাড়ি ভোলার মনপুরায়। তার বাড়িতে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই লঞ্চ। বাসে ভোলা যাতায়াতের পথ দুরুহ। রাফি জানান, ফাইনাল পরীক্ষার কারণে দীর্ঘদিন বাড়ি যাওয়া হয় না তার, এবার একটু সময় নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। কিন্তু সে এই লঞ্চ ব্যবস্থাপনা নিয়ে হতাশ। রাফি বলে- ঈদযাত্রায় বাস-ট্রেন যেমন ঘোষণা দিয়ে ঈদের ১০ দিন আগ থেকে অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু করে। কিন্তু ডিজিটাল যুগেও এই লঞ্চ ব্যবস্থাপনা এখনো অ্যানালগ। সেই সাথে রয়েছে লঞ্চ কেবিন সিন্ডিকেট। আমাদের ঢাকা থেকে মনপুরা চলাচলকারী লঞ্চ আগে যেমন ফিক্সড ছিলো ফারহান-৩, ৪ এবং তাসরিফ-১, ২ কিন্তু। এখন আজকে যাচ্ছে ফারহান-৩ ফারহান-৮।

আমি তিন দিন আগে ফারহান-৩ এর কতৃপক্ষকে কল দিয়ে কেবিন বুকিং করতে চাই। কিন্তু তারা শিউর না যে আজ কোন লঞ্চ যাবে। তার পর আবার আমায় কেবিন দিতে চায়নি। পরক্ষণে আমায় জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট পরিচয় দিয়ে কেবিন নিতে হয়েছে। আমার কাছে এটা সিন্ডিকেট মনে হচ্ছে। কেন আমি অন্য পরিচয় দিয়ে কেবিন নেব।

বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম খান বলেন, ঈদুল ফিতরকে ঘিরে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু ঈদকে কেন্দ্র করে যেমন যাত্রীর চাপ হওয়ার কথা ছিলো তেমনটা কিন্তু নেই। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। আর এই সদরঘাট এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় অর্থাৎ এই অঞ্চলে আসতে হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামের কবলে পড়ে থাকতে হয়। তাই যাত্রীরা পদ্মা সেতুমুখি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার আগে যেখানে ১০০-১৫০টি লাঞ্চ এই সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যেতো। এখন তা অর্ধের চেয়ে নিচে নেমে এসেছে। এখন দৈনিক ৪০-৫০টি লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘যাত্রীর চাপ তেমন নেই। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে এমটা হয়েছে। তবে গার্মেন্টস ছুটি হলে তখন যাত্রী চাপ বাড়বে হয়তো। পদ্মা সেতুর কারণে বরিশালের যাত্রীদের বেশি প্রভাব পড়ছে।’

কাল বৈশাখী ঝড়ের মৌসুমে ঈদ ভ্রমণে যাত্রীর বাড়তি নিরাপত্তার জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে- জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, “কাল বৈশাখী ঝড় কখন আসবে আমারা কেউ জানি না। তবে আবহাওয়ার অধিদপ্তর থেকে আবহাওয়ার সংকেত আমরা যথাযথভাবে সংগ্রহ করব। সেসব তথ্য লঞ্চ মালিক সমিতি এবং লঞ্চ মাস্টারদের সঙ্গে নিয়ে যে হোয়াটস্ অ্যাপ গ্রুপ রয়েছে সেখানে পাঠানো হবে।”

তিনি আরও বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আগামী ৬ এপ্রিল ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচল শুরু করবে। ইতিমধ্যে ১৩০টি লঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। ঈদে নদীপথে ঘরমুখী মানুষের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিতে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্যা.ভ/ত